মহাপুরুষ, মহামানব, বা অবতার যাহাই বলুন তাঁকে ভগবান বলে পূজা করলেই
তাঁর অনুযায়ী বা কর্মকর্তা সৈনিক হওয়া যায় না । ভক্ত হওয়া যায় মাত্র।
হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর কে শুধুই ভগবান বলে পূজা করাই হল নমঃজাতির
সব থেকে বড় মূর্খতা। হরিগুরুচাঁদ আমাদের ঈশ্বর বা ভগবান সেকথা 100% সত্যি
কারন গুরুচাঁদ ঠাকুর নিজেই বলেছেন যে-
"বিশ্ব ভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।
যে যাহারে উদ্ধার করে সেই তার ঈশ্বর।।
সে ক্ষেত্রে হরিগুরুচাঁদ আমাদের উদ্ধার কর্তা তাই তাঁরা আমাদের ঈশ্বর বা
ভগবান তাতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তাই বলে তাঁদের শুধুমাত্র মন্দিরে বসিয়ে
তাঁদের বিগ্রহ বা মুর্তি বানিয়ে, ছবি সাজিয়ে ফুল চন্দন সুগন্ধি ধুঁপ
জ্বালিয়ে পূজা করাই আমাদের একমাত্র করনিয় নয়।তাই যদি করি তাহলে তাঁদের
প্রতি চরম অবহেলা করা হবে, অসম্মান করা হবে।
হরিগুরুচাঁদ কে
যদি আমরা যোগ্য সম্মান দিতে চাই, সত্যি যদি তাঁদের ভালবেসে থাকি তবে আমাদের
প্রথম করণীয় হতে হবে, তাঁদের নির্দেশিত পথ ও বাণী অনুসরণ করা।তাঁদের
দেখানো পথধরে চলা ।গুরুচাঁদ ঠাকুর সমাজকে যে পথে যেখানে নিয়ে যেতে
চেয়েছিলেন তাঁর সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।সুস্থ সবল চরিত্রবাণ শিক্ষিত
সমাজ গড়ে তোলা।কারন শিক্ষাহীন চরিত্রহীন মানুষ ও পরিবার সুস্থ সুন্দর
সবল আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে পারে না।
হরিগুরুচাঁদের
বাণী ও নিষেধ মেনে চলাই হবে তাঁদের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন। তা না
করে যদি মাটির মুর্তি করে, কাগজের ছবি করে দামী ফ্রেমে বন্দি করে পূজার
ঘরে, মন্দিরে বন্দি করে রাখি, প্রতি বুধবার হরিসভা করে ভক্তিতে গদগদ হয়ে
গান গেয়ে চোখের জল ফেলে, মাঝে মধ্যে বিড়ি টেনে, পান চিবিয়ে লোকের সমালোচনা
করে গুস্টির পান্ডিচটকে খিচুড়ি খেয়ে উদর পূর্তি করে বাড়ি ফিরি তবে ঐ
কান্দাকাটাই সার হবে, কাজ কিছুই হবে না।
আপনাকে ভাল থাকতে হলে ভাল কাজ করতে হবে, সত্যকে আশ্রয় করে সৎ পথে চলতে হবে।হরিচাঁদ ঠাকুর বারবার সেই কথাই বলে গেছেন :--
আপনাকে ভাল থাকতে হলে ভাল কাজ করতে হবে, সত্যকে আশ্রয় করে সৎ পথে চলতে হবে।হরিচাঁদ ঠাকুর বারবার সেই কথাই বলে গেছেন :--
" লয়ে নিজ নারী ব্রহ্মচারী সৎ চরিত্র রবে।
হাতে কাম মুখে নাম, সদা সত্য কথা কবে।।"
হরিগুরুচাঁদ এর নির্দেশিত পথে চলতে হবে।সংসারের সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম
করতে হবে, তা নাকরে যদি দিন রাত ঠাকুর ঘরে বা মন্দিরে বসে হরিবোল হরিবোল
করেন, বা হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, করতে থাকেন তাহলে
হরিচাঁদ বলুন আর কৃষ্ণ বলুন কেউই আপনার ও আপনার পরিবারের দুঃখ হরণ করতে
পারবে না ।কোন ভগবানই আপনার জন্য দশটি টাকা আয় করে দেবে না, আপনার ছেলে
মেয়ে পরিবারের ভার নেবেন না।
তাই তিনি বলছেন ---
তাই তিনি বলছেন ---
"গৃহ ধর্ম গৃহ কর্ম করিবে সকল।
হাতে কাম মুখে নাম ভক্তিই প্রবল।।"
তাই বলি হরিগুরুচাঁদ কে তাঁদের যোগ্য সম্মান যদি দিতে চান তবে
তাঁদের আজ্ঞা এবং নিষেধাজ্ঞা পালন করে চলুন।তাঁদের দেখানো পথ ধরে এগিয়ে
চলুন।ভক্ত নয় সৈনিক বানুন ।কান্দাকাটি করে চোখের জলে বুক না ভাসিয়ে "হাতে
কাম আর মুখে নাম করুন।
সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটান, শুধু স্কুলের শিক্ষার নয়, সামাজিক শিক্ষারও প্রসার ঘটান।সমাজ থেকে ব্যভিচার, অনাচার দুর করে সুস্থ সবল সুন্দর।পরিবেশ গড়ে তুলুন।
সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটান, শুধু স্কুলের শিক্ষার নয়, সামাজিক শিক্ষারও প্রসার ঘটান।সমাজ থেকে ব্যভিচার, অনাচার দুর করে সুস্থ সবল সুন্দর।পরিবেশ গড়ে তুলুন।
সৎ হোন, সৎ চরিত্রবাণ হোন,
সত্য ও সততার সাথে সমাজে মাথা উচু করে চলুন।হরিগুরুচাঁদ তো সেই পথেই
দেখিয়ে গিয়েছেন।আর সেটাই হবে হরিগুরুচাঁদের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন।
আর যদি অসৎ, মিথ্যাবাদী, চরিত্রহীন ব্যভিচারী হোন তবে নিজের পরিবারের থেকে শুরু করে সমাজের কোন স্তরেই সন্মান পাবেন না।
সত্যবাদী, সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবাণ হবার শিক্ষাই মতুয়া ধর্মের মূল নীতি।যে নীতি মতুয়া ও বৌদ্ধ ধর্ম ব্যতিরেকে অন্য কোন ধর্মে দেখা যায় না।
আর যদি অসৎ, মিথ্যাবাদী, চরিত্রহীন ব্যভিচারী হোন তবে নিজের পরিবারের থেকে শুরু করে সমাজের কোন স্তরেই সন্মান পাবেন না।
সত্যবাদী, সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবাণ হবার শিক্ষাই মতুয়া ধর্মের মূল নীতি।যে নীতি মতুয়া ও বৌদ্ধ ধর্ম ব্যতিরেকে অন্য কোন ধর্মে দেখা যায় না।
বারটি(১২) আজ্ঞা বা আদেশ যাকে বলা হয় দ্বাদশ আজ্ঞা ।
সেগুলো নীচে দেওয়া হল।
সেগুলো নীচে দেওয়া হল।
- মাতাপিতিকে ভক্তি শ্রদ্ধা কর, তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন কর।
- সদা সত্য কথা বলাঃ গৃহধর্ম রক্ষা করে বাক্য সত্য কয় ।
- পরস্ত্রীকে মাতৃ জ্ঞান কর এবং দুঃখীকে সহযোগিতা দানঃ
- বাহ্য অঙ্গ সাধুসাজ ত্যাগ কর, সাধন, ভজন, দীক্ষা, তীর্থ পর্যটন প্রভৃতি আচার সর্বস্বতা পরিত্যাগ করাঃ
- ভাবের আবির্ভাবঃ গৃহেতে থাকিয়া যার ভাবোদয় হয় ।
- ষড়রিপু থেকে সাবধান থাকো।দৈনিক প্রার্থনা দ্বারা দেহ, মন ও ইন্দ্রিয় কে বশে রাখ।
- জ্ঞানতত্ত্বঃ চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ কোর না:- কিবা শূদ্র কিবা ন্যাসী কিবা যোগী কয় ।
- জগৎ কে প্রেম কর, জীবের প্রতি দয়া করা ও মানুষের প্রতি নিষ্ঠা রাখাঃ
- উদ্ধার : ঈশ্বর কে আত্ম দান কর , কর্তাকে(হরিচাঁদ)ঈশ্বর0 মনে করাঃ
- কর্ম ও ধর্মের সমন্বয় সাধন , হাতে কাম মুখে নাম কর :
- পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, দেহ ও মনশুদ্ধ রাখা।দৈনিক প্রার্থনা কর:
- সংযম রাখাঃ পরপতি পরসতী স্পর্শ না করিবে ।
বানপ্রস্থী পরমহংস তার তুল্য নয় ।
পরনারী মাতৃতুল্য, মিথ্যা নাহি কবে ।
পরদুঃখে দুঃখী সদাই সচ্চরিত্র রবে ।।
দীক্ষা নাই, করিবে না তীর্থ পর্যটন ।
মুক্তিস্পৃহা শূন্য, নাহি সাধন ভজন ।।
সেই সে পরম সাধু জানিবে নিশ্চয় ।।
যেই জানে আথতত্ত্ব সেই শ্রেষ্ঠ হয় ।।
জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা ।
ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা ।।
বিস্বভরে এই নীতি দেখি পরস্পর ।
যে যারে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর ।।
মালাটেপা ফোটাকাটা জলফেলা নাই ।
হাতে কাম মুখে নাম মনখোলা চাই ।।
নরনারী প্রাতঃস্নান অবশ্য করিবে ।
দেহশুদ্ধি চিত্তশুদ্ধি অবশ্য আসিবে ।।
না ডাক হরিকে, হরি তোমাকে ডাকিবে ।।
হরিচাঁদ নির্দেশিত এসব গুণের অধিকারি একজন গৃহী হয়ে ওঠা আসল কথা । এসব গুণের অধিকারি কোন গৃহী হরিকে না ডাকলেও হরি তাকে ডাকবেন ।
উপরে উল্লেখীত গুলোকে দ্বাদশ আজ্ঞা বলা হলেও এরকম আরো বেশ কিছু আজ্ঞা বা নির্দেশ আছে লীলামৃতের পাতায় পাতায় ।
উপরে উল্লেখীত গুলোকে দ্বাদশ আজ্ঞা বলা হলেও এরকম আরো বেশ কিছু আজ্ঞা বা নির্দেশ আছে লীলামৃতের পাতায় পাতায় ।
এই আদেশের সঙ্গে সাতটি নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হ'ল, যাকে বলা হয় সপ্ত নিষেধাজ্ঞা। সে গুলো হ'লঃ-
(১)
ভিন্ন গুরু ও ভিন্ন দল না করাঃ
মতুয়ার এক গুরু ভিন্ন গুরু নাই ।
মধ্যস্বত্ত্ব জমিদারি ধর্মক্ষেত্রে নাই ।।
ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ করো না গোসাই ।
(২) নারী দিয়ে অঙ্গ সেবা না করাঃ
নারী দিয়ে অঙ্গসেবা হবে ধর্মক্ষয় ।
তেল ঘসা অঙ্গসেবা মহা ব্যাভিচার ।
(৩) পরনারীকে মাতৃ জ্ঞান করে দূরে থাকা ।
(৪) পরিহাস বাচালতা কখন না করা ।
(৫) মদ্যপান নিষেধ :
(৪) পরিহাস বাচালতা কখন না করা ।
(৫) মদ্যপান নিষেধ :
মদ গাঁজা নাহি খাবে করবেনা চুরি ।
(৬)জুয়া খেলা নিষিদ্ধ :
তাস-দাবা-জুয়া খেলা সব ছেড়ে দিতে হবে ।
(৭) শঙ্কা ত্যাগ কর :
কাউকে (অর্থাৎ দেব-দেবীর প্রতি) ভয় করার দরকার নেই।
এছাড়াও আরো অনেক কিছু করার বা না করার আছে সে গুলো আমাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।
জয় হরিচাঁদ, জয় গুরুচাঁদ, জয় হরিবল .......
তথ্যসূত্র:
...
...
...